কুংফু পান্ডার মূল চরিত্র পান্ডা কেন ?

শুধু পড়ে পড়ে ঘুমানো আর খাওয়া দাওয়া করা ছাড়া বাকি কাজ করতে প্রচন্ড অলসতা লাগে? নড়াচড়া না করতে করতে ফুলে ফেপে উঠেছেন? আপনার স্পিরিট এনিম্যাল নিশ্চয়ই পান্ডা। তবে তা কুংফু পান্ডা নয় মোটেই।  নিজের ভেতরে যখন খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া বাদ বাকি কাজ করতে প্রচন্ড অলসতা লাগে তখন অনেকেই নিজেকে পান্ডার সাথে তুলনা দেন। গোলগাল, অলস এই প্রাণীটি তাহলে কিভাবে হয়ে উঠলো কুংফু পান্ডার ড্রাগন ওয়ারিয়রের যোগ্য উত্তরাধিকারী? কিভাবেই বা অন্য কোনো শারীরিকভাবে ফিট প্রাণীকে ছেড়ে বরং পান্ডার মত মোটাসোটা, অলস প্রাণীকে কুংফু ভিত্তিক একটি সিনেমার মুল চরিত্রে চিন্তা করলো নির্মাতারা?

দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটানো পান্ডা; Image Source:Pixabay

কারো শারীরিক গঠন থেকে তার শারীরিক সক্ষমতা, শক্তি, দ্রুততা,নমনীয়তা, ব্যালেন্স বা এমন যে কোনো  গুণ যা খেলোয়াড় সুলভ, আন্দাজ করা সম্ভব নয়। কুংফু পান্ডা খ্যাত “পো” এর শারীরিক কাঠামো ফিট বা শক্ত মাংসপেশি বহুল না হওয়া সত্ত্বেও কি সে আসলেই “ড্রাগন ওয়ারিওর” হওয়ার যোগ্য ছিল? এত বিশাল ওজন নিয়ে কি পো মার্শাল আর্টের জটিল আক্রমণগুলো পর্যাপ্ত শক্তি নিয়ে করতে পারত? অবশ্যই!!

সত্যি বলতে পো এর শারীরিক গঠন বরং তার জন্য বোনাস ছিল। এখানে একটি থিওরি আছে যে, পো এর শারীরিক গঠন বরং তাকে ড্রাগন ওয়ারিয়র হওয়ার জন্য আরো ভালোভাবে উপযুক্ত করে তোলে, এটা শুধু এজন্য না যে সে ভালো আক্রমণ করতে পারে কিন্তু এজন্যেও যে সে স্বাভাবিক এর চেয়ে অনেক বেশি আক্রমণ শরীরে শোষণ করে নিতে পারে। কুংফু পান্ডা ২ এ ভিলেন লর্ড শেন সরাসরি পো এর দিকে বোমা নিক্ষেপ করে যার ধাক্কা পো এর শরীরে একদম বরাবর লাগে কিন্তু পো এই প্রচন্ড ধাক্কায়ও বেচে যায় কারণ ধাক্কাটি তার শরীরের বালিশের মত তুলতুলে মাঝের অংশে আঘাত করে। কুংফু পান্ডার প্রথম পর্বে তুষার চিতাবাঘ ‘তাই লং’ এর আক্রমণ করার স্পেশাল পদ্ধতি ছিল অপর পক্ষের নার্ভে আঘাত করে তাকে সাময়িক প্যারালাইজড করে দেওয়া। কিন্তু তাই লং অন্য সবার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে সফলভাবে আক্রমণ করতে পারলেও পান্ডা ‘পো’ কে এই পদ্ধতিতে কুপোকাত করতে পারে নি। প্যারালাইজড হওয়ার পরিবর্তে পো এর বরং সুড়সুড়ি অনুভূতি হয়। পো এর শরীর চর্বিযুক্ত হওয়ায় তার নার্ভ সিস্টেম খুজে পাওয়া ছিল শত্রুর জন্য কষ্টসাধ্য। পো এর এই চর্বিযুক্ত শরীর তাকে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা উভয়েই সমান সাহায্য করত।

পান্ডার অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত শরীর ব্যাথা প্রশমনে সাহায্য করে; Image Source: Pixabay

সাধারণত পান্ডারা হরহামেশাই গাছে বসে খাবার খাওয়ার সময় গাছ থেকে পড়ে যায়। এতে তাদের যতটুকু ব্যাথা পাবার কথা তারা তা পায়ই না। বিজ্ঞান মতে, তাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি তারা যখন পড়ে যায় বা কোনভাবে ব্যাথা পায় তা প্রশমন করতে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিক  গবেষণা মতে যারা অতিরিক্ত ওজনের হয় তাদের শরীরের চাপযোগ্য ব্যাথা নেওয়ার ক্ষমতা অন থেকে বেশি থাকে৷  শুধু সত্যিকার জগতেই নয়, এনিমেশন কুংফু পান্ডার জগতেও এই যুক্তির প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।

পৃথিবীতে অজস্র শারীরিক গঠনে শক্তিশালী ও ফিট প্রাণী থাকা সত্ত্বেও নির্মাতারা মার্শাল আর্ট ভিত্তিক একটা এনিমেশন সিনেমার প্রধান ভূমিকায় পান্ডার মত হেয়ালী, স্বাস্থ্যবান, অলস বেছে নেওয়ার মূল কারণের অন্যতম একটি থিওরি হচ্ছে আমাদের গতানুগতিক চিন্তার পরিবর্তন ঘটানো। শুধু মাত্র কারো শারীরিক গঠন থেকেই তার শারীরিক সক্ষমতা,প্রতিভা,শক্তি, স্কিল জানা সম্ভব নয়।  শারীরিক সক্ষমতা তার সাথে মানসিক সক্ষমতাও মানুষকে শক্তিশালী করে। পান্ডা পো মানসিকভাবে উৎফুল্ল চরিত্রের যার অহিংস, দয়া, প্রফুল্লতা,উদ্দম তাকে শুধু শারীরিক ভাবে সক্ষমই করে নি বরং মানসিকভাবেও ফোকাস করেছে যা তাকে পরবর্তীতে “চি” আয়ত্ত্ব করতে সাহায্য করেছে৷

পান্ডাদের খাদ্যাভ্যাস শের উপর নির্ভরশীল। পান্ডার ৯৯% খাদ্যই বাশ, শরীরের অন্যান্য ঘাটতি পূরণ করতে তাই তারা দৈনিক ২০-৪০ পাউন্ড বাশ খায়। পান্ডাদের পাকতন্ত্র তৃণভোজী প্রাণীর মত কম মাংসাশী প্রাণীর মত বেশি। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাদের শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়া বাশের মত  তৃণ হজমে সাহায্য করে। কিন্তু দুর্বল খাদ্যাভ্যাসের কারণে তারা খাওয়া ছাড়া দিনের বাকি অংশ ঘুমিয়ে কাটায়।

প্রকৃতিতে খাদ্যের জন্য বাঁশের উপর নির্ভরশীল পান্ডা, সিনেমাতে বাঁশ ছাড়া অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের উপরও নির্ভরশীল; Image Source: Pixabay

প্রকৃতিতে পান্ডা খুবই অলস হলেও,  সিনেমাতে যথেষ্ট লড়াই করার মতন যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজে পো কে দেখা যায়।  কারণ পো কোনো সাধারণ পান্ডা নয়!!! এর কারণ হল, সাধারণত পান্ডাদের খাদ্য শুধুমাত্র বাঁশ হলেও, সিনেমাতে আমরা পো এর খাদ্যাভাসে বাঁশ ছাড়া বাকি অনেক প্রকারভেদের খাবার খেতে দেখতে পাই।  যেমন নুডুলস, ডাপ্লিংস,টফু, বনরুটি যা খুবই শক্তিদায়ক। হয়ত এই সাধারণ খাদ্যাভ্যাসই একটি সাধারণ পান্ডাকে অসাধারণ কুংফু পান্ডাতে পরিণত করেছে।

মাস্টার শিফুর বাকি ছাত্ররা ছিল বাঘ, বানর, সারস পাখি, সাপ ও পতঙ্গ যারা ছিল প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ও আক্রমণে ক্ষিপ্র। মার্শাল আর্টের অনেক স্টাইলের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণীদের স্টাইলও রয়েছে তার মধ্যে পাঁচটি স্টাইল হল বাঘের স্টাইল, বানরের স্টাইল, সারস পাখি স্টাইল, সাপ স্টাইল ও পতঙ্গ স্টাইল। ফিউরিয়াস ফাইভ এর সবাই নিজেদের স্টাইলে দক্ষ ছিল  কিন্তু উগওয়ে কেনো ফিউরিয়াস ৫ এর যে কোনো একজন কে ড্রাগন ওয়ারিয়র না বানাইয়ে পো এর মতন মোটাসোটা পান্ডাকে ড্রাগন ওয়ারিয়র বানালো তা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা দেখা যায়। মূলত ফিউরিয়াস ফাইভের সবাই নিজেদের কুংফু স্টাইলে দক্ষ হলেও কেউই ড্রাগন স্টাইলে দক্ষ ছিল না। অপরদিকে পো ছোটবেলা থেকেই ফিউরিয়াস ফাইভ এর ফ্যান ছিল। সে ফিউরিয়াস ৫ এর প্রত্যেক সদস্যের আক্রমণের স্টাইল অনুকরণ করে অনুশীলন করে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছিল।  ফলাফল হিসেবে পো এর আক্রমণে তার নিজস্বতার সাথে ছিল ফিউরিয়াস ফাইভের আক্রমণের স্টাইলের সমন্বয় যা তার ড্রাগন ওয়ারিয়র হওয়ার শক্ত ভিত তৈরী করে।  তার নিজস্ব আক্রমণের এক ধরনের ভংগিমা ছিল যা ড্রাগন স্টাইলের মতন ছিল। সবমিলিয়ে সে ড্রাগন ওয়ারিয়র হওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে নিজের অজান্তেই।

পান্ডা চীনের এক ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। পান্ডার মূল আবাসস্থল হল চীনে। এই সিনেমাতে নির্মাতাগণ চীনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ও পান্ডা পো কে এত সুন্দর ভাবে প্রদর্শন করছে যে চীন থেকে এই এনিমেশন সিনেমাটি একটি বিরাট ব্যাবসা সফল প্রজেক্ট হয়।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *